শনিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৬

নিঝুম দ্বীপ এর নিস্তব্দতা অনুভব ...............।।

অব শেষে স্বপ্নের নিঝুম দ্বীপ !!



সেই ছোট বেলায় ইত্তেফাক এর একটি Article পরে ছিলাম নিঝুম দ্বীপ সম্পর্কে , সেই থেকে আজবদি স্বপ্ন ছিল কবে যাব এই Silent Island এ ।
আমার খুব কাছের ছোট ভাই সালমান এর এক ব্যাচ সিনিয়র ও রাহুল বাসাক এর বন্ধু আশিস দত্ত । ওরা জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটিতে Zoology Final Year এর Student । আশিস এর স্যার তাকে নিঝুম দ্বীপ সম্পর্কে Detels খবর নেয়ার জন্য নিঝুম দ্বীপ যেতে বলেছে । একা যেতে কার ভালো লাগে ? তাই রাহুল আর সালমান ও যাবে , আমাকেও যেতে বললো। ঠিক হল ১৯/১০/১৩ তে যাবো । শেষের  দিকে এসে সালমান যাবে না তার সমস্যা আছে আর রাহুলের স্যার ওরে কাপ্তাই পাঠিয়ে দিল । আমি পরলাম বিপদে , কারন আশিস এর সাথে পরিচইয়ের দিন মাত্র ৫ মিনিট এর মতো কথা হয়েছে । কিভাবে Adjustment হবে তা নিয়ে পরলাম সমস্যায় । পরে ঠিক হল অঙ্কুরও যাবে । অঙ্কুর এর সাথে পরিচয় এর পরে ওর সাথে কথা হয়েছে মাত্র ৩০ মিনিট এর মতো , তারপরেও ঠিক করলাম যাবো । COZ স্বপ্নের নিঝুম দ্বীপ দেখার লোভ সামলাতে পারছিলাম  না ।প্রতিটি মুহূর্ত আর যেতে চাচ্ছিল না  । দিন গুণতে থাকি । অবশেষে আসলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ ।

১৯ তারিখ আমি উত্তরার বাসা থেকে বাহির হলাম সদরঘাট এর পথে আর আশিসরা জাহাঙ্গীরনগর থেকে । আমি আগে আসাতে ডেকে জায়গা পাইলাম।একটু দেরি হলে তা আর পাওয়া যাইত না, এখান কার নিয়ম হল আগে আসলে আগে পাবেন অগ্রাধিকারে।লঞ্চ M.V. Farhan . আশিস দের সাথে আরও দুই জন আসলো এক জন Holy Family Hospital এর Student বাধন , বাধন হল অঙ্কুর এর বন্দু । জাহাঙ্গীরনগর এর পরিবেশ বিজ্ঞান এর ছাত্র দিলশাদ , আশিস এর বন্দু ।অনেক দিন পর সদরঘাট আসলাম । মনের কোনে নাড়া দিল, সেই ছোট বেলায় মার সাথে চাঁদপুর যাওয়ার ভাললাগা গুলো । কষ্ট লাগলো , সেই ছোট্ট বেলার বুড়িগঙ্গা কোথাই যেন হারিয়ে গেছে । লঞ্চ এর পিছনে ছুটে চলা সেই গাঙচিল গুলা আর নাই । খুব ভাল লাগতো সেই দৃশ্য গুলো । আজ আর নাই । নাই সদরঘাট এর সেই কুলি ওয়ালারা  ।


৫.৩০ এ লঞ্চ ছারল । আমরা ডেকে শুয়ে, বসে কার্ড খেলে যাচ্ছিলাম । মাঝ রাতে ঝড়ো হাওয়া । কনকনে ঠাণ্ডা জমিয়ে দিচ্ছিল । ভোর রাতে একটু ঘুম ।



 ভোর ৬ টায় মনপুরা ঘাটে ।



৭ টা বেঝে গেলো হাতিয়ার তমরুদ্ধি ঘাটে পোচ্ছতে । ঘাটে নেমে একটা হোটেলে নাস্তা সেরে নিলাম । ১ কি. মি. হেটে চলে আসলাম বেকের বাজার । সেখান থেকে মুরির টিনের বাসে করে CDSP  মোড় । সেখান থেকে মোটর বাইকে করে মোক্তার ঘাটে আসা যায় , কিন্তু আমরা হাটা সুরু করলাম । আকর্ষণ সামনে স্বপ্নের নিঝুম দ্বীপ আর সাথে আছে DSLR , সময় যে কিভাবে চলে যাচ্ছে বুঝাই যাচ্ছে না । রাস্তার দুই পাশে সবুজ ধান গাছ দেখে নিজের অজান্তেই মনে মনে গেয়ে উঠলাম  " রুপে অপরুপ রুপে মা তুমার ......... " গানটি । আমার বে সুরা গলা তাই গলা ছেরেও গাইতে পারতাছি না ।আমার বেসুরা গলা শুনে যদি সবাই ...... থাক সেই কথা নাই বাআ বলি ।


হাটতে হাটতে পথেই পেয়ে গেলাম বাংলা মায়ের আর এক রুপ সাথিকে । সহজ সরল , নিষ্পাপ চেহারা , চোখে মুখে নির্মল হাসি , সব মিলিয়ে এক অনন্য । সাথি ক্লাস সিক্স এ পরে ।ও আমাদের সাথে নিঝুম দ্বীপ এর মুল ভূখণ্ডে আসলো । ওর কাছে ছিল কামরাঙ্গা , তা দিয়েই আমাদের আপ্যায়ন করালো । গ্রাম্য সহজ সরল যেই কথাটা আমরা ঢাকা বসে শুনি তার প্রমান পেলাম সাথিকে দিয়ে । এই অল্প সময়ে সাথি আমাদের আপন করে নিয়েছিল । জানি না প্রমকরুনাময় সাথির সাথে আর দেখা করাবে কিনা ।সাথি তুমি ভালো থাক । হাটতে হাটতে চলে আসলাম মোক্তার ঘাটে । ট্রলারে করে পার হয়ে আসলাম নিঝুম দ্বীপ এর মুল ভূখণ্ডে । শরীর হালকা শিহরণে দোলা দিল । এর মধ্যেই সাথির এক পলক নিষ্পাপ চাহনি । হয়তো আর দেখা হবে না ।  হোন্ডা দিয়ে আমরা আসলাম ছোঁয়াখালি , এই প্রজন্ত পাকা রাস্তা । এর পরে কাচা রাস্তা । বৃষ্টি না হলে নামার বাজার প্রজন্ত হোন্ডা দিয়েই আসা যায় । আমরা হাটা শুরু করলাম প্রায় ২ কিলো মিটার হবে । ছোঁয়া খালি দারুন একটা স্থান । দুই পার্শে কেউরা বন মাঝখানে পীচ ঢালা পাথ । ভাগ্য ভালো হলে এখানয়েই সন্ধ্যায় হরিন দেখা যায় । মেঠো পথে দুই কিলো মিটার হাটার পর চলে আসলাম কাঙ্খিত নামার বাজার । মসজিদ বডিং  এ থাকার বেবস্থা ও গোসল করে খাইতে বাহির হলাম । দুপুরে বিশ্রাম । সময় কম তাই ঠিক করলাম পরের দিন বন দেখক্তে বাহির হব । বিকাল বেলাটা মেঘনা  নদীর বালু চরে ঘুরে বেড়ালাম । নদীর পারে না আসলে দেখা হত না সন্ধ্যায় রাখাল বালকদের গরু ও ভেরার পাল নিয়ে ঘরে ফেরা । অসাধারণ একটি মুহূর্ত ।





 দিনের বেলা বুঝা যায় নাই এখানে এতো মানুষের বসবাস করে  । সন্ধ্যায় এখানে মানুষের মিলন মেলা দেখে বুঝাগেল । নামার বাজারটা খুব ছোট । ৩ টা খাওয়ার দোকান ,২/১ টা চা পুরি সিঙ্গারার দোকান  , ঔষধ , মুদি অন্যান্য সব মিলিয়ে ২০/২৫ টা দোকান হবে । এখানকার খাওয়া খুব সস্থা । পরিচয় হোল সুমন, রাজিব , জিয়া দের সাথে । ওরা ঢাকা থেকে এসেছে । রাতেই ট্রলার ঠিক করা হোল ১৫০০ টাকায় , একটু বেশি ।


 সকালে নাস্তার পর্ব শেষ করে বেরিয়ে পরলাম । আমাদের গাইড সাগর , মনির , রাহাৎ । ট্রলার রাহতদের । এখানে ট্রলার চলে জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করে ।


 বন বিভাগের অফিসের গেটের উপরে মৌচাক আমরা বন বিভাগের অফিস পার হয়ে পূর্ব দিকে কিছু দূর গেলে একটা সাকো দিয়ে পার হয়ে ডুকে পরলাম কাঙ্ক্ষিত নিঝুম দ্বীপ এর বনে । বনের এই অংশ টা খুব ছোট , আগে এক সময় এখানে হরিন ছিল , এখন নাই । কিন্তু অনেক পাখির কিচির মিচিরে মনটা আনমনে হয়ে গেলো ।


 ট্র্যাকিং করে আমরা চলে আসলাম খালের পারে । আমাদের মূল গন্তব্য হোল চৌধুরি খাল এর পাশের বনটি ।


আমরা ৮ জন দুইটি গ্রুপ এ ট্র্যাকিং  শুরু করলাম । হরিনের পা এর ছাপ দেখে দেখে আমরা এগুতে লাগলাম । হরিনের মাথার একটা খুল্লি , কশেরুকা ও কিছু হার পেলাম । দেখতে পেলাম একটা মৃত হরিনের দেহাংশ , ৩ টা ছোট সাপ ,শামুক ও কাঁকড়া । পাখির কিচির মিচির তো আমাদের সঙ্গী । আশিস এর ভাগ্য ভালো , ও এর মধ্যে একটা হরিন ও একটা শিয়াল এর দেখা পেয়েছে ।



বনের ভিতরে   জীব জন্তুর পানি খাওয়ার জন্য একটা সুন্দর জলাধার আছে । আমরা গোসল করার লোভ সামলাতে পারলাম না । হালকা গুরি গুরি বৃষ্টির মধ্যে নেমে পরলাম আমরা । কেউই মনের আনন্দে গোছল করতে পারছিলাম না । কারন হরিনের দেখা এখন পাইনাই বলে । সবার চোখে মুখে অভিবেক্তিতেই বুঝা যাচ্ছে ।কিন্তু কেউই বলতে পারতাছে না ।

 আমরা আবার ট্রলারে উঠে রওনা দিলাম দুপুরের খাওয়ার বেবস্থা করার জন্য , রাখালদের ছোট একটা বিশ্রাম নেয়ার টং ঘর আছে , সেইখানে আমাদের এই বারের গন্ততব্ব ।


 সবাই একটা হতাশা নিয়েই চলে যাছি লাম। খালের দুই পাশেই সবার নজর , যদি দেখা মিলে । ফটোগ্রাফার রা পাখির ছবি তুলা নিয়ে আছে । হঠাৎ আমার চোখ স্থির হয়ে গেলো হরিনের পাল দেখে । আমি বাকরুদ্ধ ......... এ কি কলমের খোচায় বুঝান যাবে ।আশিস কে আস্তে ডাক দিয়ে দেখালাম , সবাই চুপ মেরে গেলো .........।।আমরা সার্থক । ট্রলার খুব সাবধানে পারে ভিরাল । হাঁটু পরিমান ঢেবে যাওয়া কাঁদাই আশিস নেমে গেলো ছবি তুলার জন্য । আমরা ট্রলারে বসেই দেখলাম হরিনের তিরিং ভিরিং লম্ফ । দুইটি মোটা তাজা শিয়ালও দেখা হয়ে গেলো । এখানে Sundarban এর Royal Bengal Tiger এর মতো হরিনের উপর খবর দারি করে শিয়াল মশাইরা।


খাল পারি দিয়ে এসে আমরা শবুজ মখমহলের মাঠে নামলাম । এখানেই সন্ধ্যায় হরিনের পাল আসে ঘাস খাওয়রা জন্য । মাঠ পার হলেই রাখালদের বিশ্রামাগার , অখানে মুরগী আগুনে ঝলসিয়ে পেটে দিলাম । সবারেই প্রচণ্ড খিদা লেগেছিল । আমরা কয়েক জন রাখাল বালকদের ভাত চেয়ে খাইলাম । ওরা অত্তান্ত মিশুক । আলু র লাল মরিচের ভাঝি , অসাধারণ একটি খাওয়া । এতো মজার একটা খাওয়া , না খেলে বুঝতামি না ।





সবুজ মাঠ পার হয়ে তারপরে খাল । আমাদের ছুটে চলা । সারি সারি বক সবুজ ঘাসে , হয়তো চাঁদের বুড়ি শাঁক তুলছে , কিন্তু এতো চাঁদের বুড়ি আসলো কোথাথেকে , অবাক বিশ্বয় ! এটাই নিঝুম দ্বীপ এর প্রাকৃতিক রূপ । সরু খাল দিয়ে আমাদের ছুটে চলা , পাখির কোলা হল আর মহিষের বাথান । কি দেখবে নাকি তোমরা ! পিছনে ফেলে আসা কেউরা বনে হরিনের বিচরন !!!!!!!!!!


 লেখা :Quamruzzaman Babu
Photo Credit: Quamruzzaman Babu , Ashis Datta 

৩টি মন্তব্য:

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মশা ও মাছি বাহিত রোগ , যা ব্যাঙ মশা ও মাছি খেয়ে এই সকল রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে

                                                                             " বন্য প্রাণী বেঁচে থাকুক আমাদের প্রয়োজনে " ...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ