শনিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৬

আগে যা দেখা হয় নাই !!





এই বার সাতছরি যাওয়ার প্ল্যানটা হুট করে হয়ে গেল । রাহুল বসাক যাবে ওর একটা কাজে , আমাকেও যেতে বললো ওর সাথে। লোভ সামলাতে পারলাম না । জঙ্গল এর এক আদিমতা আমাকে নেশার মত আকৃষ্ট করে । ৩০/১০/১৩ তে উত্তরা থেকে বাসে চেপে বসলাম আমি,রাহুল, রাহুলের এক বড় ভাই সিহান । রাত্র ৯ টায় পৌঁছলাম সাতছরিতে । ......। পরিচয় হল মুনির ভাই ও প্রসেঞ্জিত এর সাতে । উনাদের সম্পর্কে চলার পাথে কমেন্টস করব।



 আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বাহির হয়ে পরলাম । সাথে পানির বোতল , টর্চ , সাপ ধরার স্টিক নিলাম। হালকা ঠাণ্ডা পরাতে একটা গরম কাপর চেপে নিলাম । অসাধারণ এক যাত্রা । রাত্রে এই প্রথম আমি জঙ্গলে গেলাম । অনুভব করলাম , প্রকৃতিকে জানতে হলে, প্রকৃতিকে বুঝতে হলে যেতে হবে প্রকৃতির কোলে । রাত্র তখন ১১ টা প্রকৃতি আলিঙ্গন করছে আপনাকে, অনুভূতিটা কেমন হবে। সুনশান নীরবতা , পাহাড়ি ছরা দিয়ে হাটা , অসংখ্য ঝি ঝি পোকার ঝি ঝি ডাক , শিয়ালের হুঙ্কার , তক্ষকের ডেকে যাউয়া , মায়া হরিণ ও শূয়র এর পদ চিহ্ন , কেমন অনুভুতি হবে। আকাশে হাজারও তাঁরার ঝিলিমিলি খেলা , বাতাসে ছাতিম ফুলের মাদকতাময় সুবাস । Pit Viper এর সাথে সাক্ষাৎ গাইড প্রসেঞ্জিত এর চোখকে ফাখি দেয়া কি চাট্টিখানি কথা , সাথে সাথে রাহুল বসাক এর ক্যামারার কিলিক । আরও কিছু ব্যাঙ ও মথ এর দেখা পেলাম, ১১.৩০ এ Dormetory তে ফিরলাম । হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসলাম । বিছানায় যাওয়ার সাথে সাথে ঘুম ।

 খাঁচাই বন্দি অথবা গৃহপালিত কোন জীব জন্তু দেখা আর জঙ্গলে পুর বন্য অবস্থায় দেখা , অনুভূতি টা কেমন হবে ।আমারটা তো আর লিখে প্রকাশ করতে পারতাছি না , আপনি ঘুরে আসুননা কোন জঙ্গলে । এমনি একটা দৃশ্য চোখ বন্দি করলাম সারা জীবনের জন্য , বন্য শুয়োরের চলা ফেরা । ভোর বেলাই পেয় গেলাম ।



 অল্প কিছুক্ষণ ঘুরে চলে আসলাম Dormetory তে । আফসোস রাহুলরা ধনেশ এর দেখা পেলো , আমার সাথে ধনেশটি রাগ করেছিল , ১০ সেকেন্ড এর বেবধানে চলে গেলো ।



দুপুরে টিপরা পল্লী তে গেলাম , অসাধারণ ! মাটির ঘর গুলা খুব সুন্দর , দেখা হলো ওদের সহজ সরল চলা ফেরা,যা বাহিরে থেকে বুঝার উপায় নাই । আপনি অনুমতি নিয়ে ওদের পল্লীটা ঘুরে দেখক্তে পারেন। প্রশেঞ্জিত ঘুরিয়ে দেখাল ওদের পাড়াটা । এটি যেন সাতছরির একটি অলঙ্কার । আজ ওদের মধ্যে শোকের ছায়া । গতকাল পরসেঞ্জিত এর নানি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। কিছুক্ষণ আগে উনাকে দাহ করানো হয়েছে ।আমি সত্যি ! সত্যি অবাক হয়েছি প্রসেঞ্জিত এর ব্যাবহারে । ওর নানির দেহ রেখে ও আমাদেরকে সময় দিয়েছে । আমরা ঢাকার মানুষরা কি করতাম ? আমরা কতোটা যান্ত্রিক মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করেছি বারবার ,উত্তর খুজে পাইনাই । Sorry সুস্ময়। প্রসেঞ্জিত এর আর একটা নাম সুস্ময়।




 টিপরা পাড়া থেকে ফিরে এসে Rhesus Macaque আর জঙ্গল এর কিছু ছবি তুলছিলাম , হঠাৎ চোখ পরল লাল সূর্য ডুবা । নদী আর সাগর পারে সূর্য ডুবা অনেক দেখেছি , জঙ্গলে সূর্য ডুবা এই প্রথম। বিশাল এক বড় থালা আস্তে আস্তে অস্থমিত যাছে । কিন্তু ঠিক মতো তুলতে পারছিলাম না বড় বড় সেগুন গর্জন গাছ গুলার জন্য। রাহুলের কাছে ক্যামারা দিয়ে আমি সূর্যের দিকে তাকাতে তাকাতে ডাল পালা বিহিন খোলা জায়গা খুজতে সামনে এগোচ্ছই , বিধিভাম , ভিমরুল এর চাকে পড়ে গেছিলাম , দেছুট । আমার দৌড় রাহুলের ক্যামারা বন্দী হতে থাকলো আর আমার হাসি ...। তখনও বুঝি নাই ভিমরুল এর হুল এতো ভয়ঙ্কর হয় ।



সন্ধ্যায় বাহির হলাম মুনির ভাই, রাহুল, শিহান , প্রসেঞ্জিত ও আমি । মুনির ভাই ও উনার Wife তানিয়া আপু সম্পর্কে অনেক শুনেছি রাহুলের কাছে । উনার কাছে এসে বুঝলাম উনি কতো উঁচু মাপের মানুষ । যেমন মন মানুষিকটা তেমনি প্রকৃতি ও জীব জন্তু সম্পর্কে ধারণা । উনার আন্তরিকতা দেখে মনেই হয় না গত রাত্রে উনার সাথে পরিচয় হইছে । Night Safari সম্পর্কে আমার কোন ধারণা ছিল না , মুনির ভাই তা সুন্ধর ভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিলেন । মুনির ভাই প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা এতো সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে ছিলেন যে আমার কাছে মনে হচ্ছিলো এইগুলাতু আগেই জানতাম । উনি প্রকৃতিকে মমতা দিয়ে ভালো বাসেন বলেই এতো সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে পারেন । আগে আমি প্রজাপতি আর মথ একই প্রকার বলে মনে করতাম , আজ ভুল ভাঙ্গল । কিছু Gecko দেখলাম । পিছন থেকে প্রসেঞ্জিত এর চিৎকার । দৌড়ে গেলাম । প্রসেঞ্জিত এর তিক্ষনো চোখে ধরা পরে গেলো Green cat snake । আমার মনে হয় বাংলাদেশ এর সবচে ছোট Zooligist প্রসেঞ্জিত , যে কোন প্রাথিস্ঠানিক শিক্ষাই এগুলা জানে না । ও বাংলা ১ম বর্ষের ছাত্র । ও Zoologi সম্পর্কে শিক্ষা নিচ্ছে মুনির ভাই , তানিয়া আপু ও প্রকৃতি থেকে । তানিয়া আপুর সাতে আমার পরিচয় হয় নাই , আশা রাখি সামনে আমার এই সোভাগ্য হবে । উনাদের নিবিড় পরিচর্যায় গড়ে উঠতাছে হাতে কলমে শিক্ষা নেয়া এক Zooligist প্রসেঞ্জিত । একটি খুব সুন্দর Htun Win's Tree Frog এর দেখা পেলাম । আগে কখন দেখি নাই । এতো সুন্দর ব্যাঙ আমাদের দেশের , সরাসরি না দেখলে মনে করতাম এইটা বিদেশী কোন ব্যাঙ । মুনির ভাই আর রাহুলদের ক্যামেরার ক্লিক , ফটা ফট ছবি তুলে যাছে ওরা । যখন Dormetory তে ফিরলাম ভ্রমরের বেথা আবার অনুভব করতে লাগলাম । জঙ্গলের নেশাই এতু ক্ষণ টের পাইনাই । ভাত খেয়ে মুনির ভাই আর রাহুলের গানের আসর , আমি ঘুমিয়ে পরলাম । মাঝ রাতে আমি বেথা বেথা করে চিৎকার করে ঘুম থেকে উঠলাম । মুনির ভাই সন্ধায় বেথার জাগায় স্প্রে ও মলম লাগিয়ে দিয়ে ছিল । তাতেই একটু ঘুমিয়ে ছিলাম । বেথা কাকে বলে বুঝলাম । হাতে মুখে পানি দিয়ে আবার স্প্রে করে শুয়ে পরলাম ।





ভোর বেলা রাহুল ও সিহান বের হল , আমি শুয়ে থাকলাম । শুয়ে বসেই কাটল দুপুর বেলাটা । ভাত খেয়ে ৩০ মি বিশ্রামের সময় দিল মুনির ভাই । এইবা বের হলাম ৫ জন ।পরিচয় হল অনেক পাখির সাথে ,দেখা হল Pharey's Leaf Monkey , Pig teiled Macaque & Capped Langur । এ ছারা প্রজাপতি ও মথ তু ছিলই । সাতছরি পাখির এক বিশাল অভয়ারণ্য । এখানে ১৬২ প্রজাতির পাখি দেখতে পাওয়া গেছে ( তথ্য সুত্র: মুনির আহমেদ ), আরও অনেক প্রজাতি থাকতে পারে বলে মনে করেন এখাঙ্কার বাসিন্দারা । আছে ১৯ প্রজাতি Frog,৩৮ প্রজাতির Reptiles . ১.৩০ মি এর মতো ট্র্যাকিং করলাম । বিকালে ফিরে চা পুরি খেয়ে সময় কাটান ।

সন্ধ্যায় আরও এক Nature Lover আমাদের সাথে যুক্ত হলেন , উনি তেলমাছরা বিট এর কর্মকর্তা , মাসুদ ভাই। এইবার আমরা একটি নতুন ছরা দিয়া ট্র্যাকিং শুরু করলাম । এই ছরাটি কোথাউ চরা আবার কোথাউ এতো সরু যে গাছের ডাল পালা গুলা শরীর ও মাথায় বারি খাচ্ছিল । গা ছম ছম করা রোমাঞ্চকর এক অনভুতি । দিনের বেলাই এই পথে ট্র্যাকিং করা রোমাঞ্চকর , আর এখন রাত্র বেলা ।এই কয় দিন যেই কয়টি Pit Viper পেয়েছি আজকেরটা সবচে বড় শুরু হয়ে গেলো Click Click । অসাধারন অসাধারন অনুভূতি , তা কি আর লিখে বুজানো যাবে ।

    চলে আসলাম Dormetory তে । ভাত খাওয়ার পর মুনির ভাই কে নিয়া বসলাম , উনি প্রকৃতির এক পাগল সন্তান , প্রকৃতিকে উনি যেমন ভালবেসেছেন , প্রকৃতিও উনাকে উজার করে দিয়েছে । সব চেয়ে অবাক বেপার হলো , সাতছরি তে উনার দেখতা১৯ টা Frog, ৩৮ টা Reptiles , ১৬২ টা পাখির নাম উনি বলে গেছেন , একটি পাখির নামও উনি দ্বিতীয় বার বলেন নাই । এই নিবৃত্তচারি প্রকৃতির সন্তান কে জানাই হাজারো সালাম । শুরু হলো গানের আসর , ঠোঁট নারলাম আমরা । গানের আসর শেষ হলে রাহুল ,সিহান, আমি মাসুদ ভাইকে তেলমাছরা এগিয়ে দিয়ে আসলাম । দুই পার্শে চা বাগান মাঝখানে পিচ ডালা পথ , হালকা ঠাণ্ডা , আকাশে হাজারো তাঁরার মেলা, কি যাবেন নাকি ? সকালে বিদায়ের ঘণ্টা , মাসুদ ভাই আর প্রসেঞ্জিত চলে আসলো বিদায় দেয়ার জন্য ..................। এর আগেও কয়েক বার সাতছরি তে গিয়েছিলাম খিলগাঁও মডেল উনিভারসিটি কলেজ থেকে , কিন্তু এইবার যা দেখলাম আগে কি তা দেখেছি
........................।।


তথ্য সুত্র : মুনির আহমেদ দাদা
লেখা: কামরুজ্জামান বাবু
ছবি তুলেছেন : মুনির আহমেদ দাদা,কামরুজ্জামান বাবু , রাহুল বাসাক

1 টি মন্তব্য:

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মশা ও মাছি বাহিত রোগ , যা ব্যাঙ মশা ও মাছি খেয়ে এই সকল রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে

                                                                             " বন্য প্রাণী বেঁচে থাকুক আমাদের প্রয়োজনে " ...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ