শনিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৬

নিঝুম দ্বীপ এর নিস্তব্দতা অনুভব ...............।।

অব শেষে স্বপ্নের নিঝুম দ্বীপ !!



সেই ছোট বেলায় ইত্তেফাক এর একটি Article পরে ছিলাম নিঝুম দ্বীপ সম্পর্কে , সেই থেকে আজবদি স্বপ্ন ছিল কবে যাব এই Silent Island এ ।
আমার খুব কাছের ছোট ভাই সালমান এর এক ব্যাচ সিনিয়র ও রাহুল বাসাক এর বন্ধু আশিস দত্ত । ওরা জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটিতে Zoology Final Year এর Student । আশিস এর স্যার তাকে নিঝুম দ্বীপ সম্পর্কে Detels খবর নেয়ার জন্য নিঝুম দ্বীপ যেতে বলেছে । একা যেতে কার ভালো লাগে ? তাই রাহুল আর সালমান ও যাবে , আমাকেও যেতে বললো। ঠিক হল ১৯/১০/১৩ তে যাবো । শেষের  দিকে এসে সালমান যাবে না তার সমস্যা আছে আর রাহুলের স্যার ওরে কাপ্তাই পাঠিয়ে দিল । আমি পরলাম বিপদে , কারন আশিস এর সাথে পরিচইয়ের দিন মাত্র ৫ মিনিট এর মতো কথা হয়েছে । কিভাবে Adjustment হবে তা নিয়ে পরলাম সমস্যায় । পরে ঠিক হল অঙ্কুরও যাবে । অঙ্কুর এর সাথে পরিচয় এর পরে ওর সাথে কথা হয়েছে মাত্র ৩০ মিনিট এর মতো , তারপরেও ঠিক করলাম যাবো । COZ স্বপ্নের নিঝুম দ্বীপ দেখার লোভ সামলাতে পারছিলাম  না ।প্রতিটি মুহূর্ত আর যেতে চাচ্ছিল না  । দিন গুণতে থাকি । অবশেষে আসলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ ।

১৯ তারিখ আমি উত্তরার বাসা থেকে বাহির হলাম সদরঘাট এর পথে আর আশিসরা জাহাঙ্গীরনগর থেকে । আমি আগে আসাতে ডেকে জায়গা পাইলাম।একটু দেরি হলে তা আর পাওয়া যাইত না, এখান কার নিয়ম হল আগে আসলে আগে পাবেন অগ্রাধিকারে।লঞ্চ M.V. Farhan . আশিস দের সাথে আরও দুই জন আসলো এক জন Holy Family Hospital এর Student বাধন , বাধন হল অঙ্কুর এর বন্দু । জাহাঙ্গীরনগর এর পরিবেশ বিজ্ঞান এর ছাত্র দিলশাদ , আশিস এর বন্দু ।অনেক দিন পর সদরঘাট আসলাম । মনের কোনে নাড়া দিল, সেই ছোট বেলায় মার সাথে চাঁদপুর যাওয়ার ভাললাগা গুলো । কষ্ট লাগলো , সেই ছোট্ট বেলার বুড়িগঙ্গা কোথাই যেন হারিয়ে গেছে । লঞ্চ এর পিছনে ছুটে চলা সেই গাঙচিল গুলা আর নাই । খুব ভাল লাগতো সেই দৃশ্য গুলো । আজ আর নাই । নাই সদরঘাট এর সেই কুলি ওয়ালারা  ।


৫.৩০ এ লঞ্চ ছারল । আমরা ডেকে শুয়ে, বসে কার্ড খেলে যাচ্ছিলাম । মাঝ রাতে ঝড়ো হাওয়া । কনকনে ঠাণ্ডা জমিয়ে দিচ্ছিল । ভোর রাতে একটু ঘুম ।



 ভোর ৬ টায় মনপুরা ঘাটে ।



৭ টা বেঝে গেলো হাতিয়ার তমরুদ্ধি ঘাটে পোচ্ছতে । ঘাটে নেমে একটা হোটেলে নাস্তা সেরে নিলাম । ১ কি. মি. হেটে চলে আসলাম বেকের বাজার । সেখান থেকে মুরির টিনের বাসে করে CDSP  মোড় । সেখান থেকে মোটর বাইকে করে মোক্তার ঘাটে আসা যায় , কিন্তু আমরা হাটা সুরু করলাম । আকর্ষণ সামনে স্বপ্নের নিঝুম দ্বীপ আর সাথে আছে DSLR , সময় যে কিভাবে চলে যাচ্ছে বুঝাই যাচ্ছে না । রাস্তার দুই পাশে সবুজ ধান গাছ দেখে নিজের অজান্তেই মনে মনে গেয়ে উঠলাম  " রুপে অপরুপ রুপে মা তুমার ......... " গানটি । আমার বে সুরা গলা তাই গলা ছেরেও গাইতে পারতাছি না ।আমার বেসুরা গলা শুনে যদি সবাই ...... থাক সেই কথা নাই বাআ বলি ।


হাটতে হাটতে পথেই পেয়ে গেলাম বাংলা মায়ের আর এক রুপ সাথিকে । সহজ সরল , নিষ্পাপ চেহারা , চোখে মুখে নির্মল হাসি , সব মিলিয়ে এক অনন্য । সাথি ক্লাস সিক্স এ পরে ।ও আমাদের সাথে নিঝুম দ্বীপ এর মুল ভূখণ্ডে আসলো । ওর কাছে ছিল কামরাঙ্গা , তা দিয়েই আমাদের আপ্যায়ন করালো । গ্রাম্য সহজ সরল যেই কথাটা আমরা ঢাকা বসে শুনি তার প্রমান পেলাম সাথিকে দিয়ে । এই অল্প সময়ে সাথি আমাদের আপন করে নিয়েছিল । জানি না প্রমকরুনাময় সাথির সাথে আর দেখা করাবে কিনা ।সাথি তুমি ভালো থাক । হাটতে হাটতে চলে আসলাম মোক্তার ঘাটে । ট্রলারে করে পার হয়ে আসলাম নিঝুম দ্বীপ এর মুল ভূখণ্ডে । শরীর হালকা শিহরণে দোলা দিল । এর মধ্যেই সাথির এক পলক নিষ্পাপ চাহনি । হয়তো আর দেখা হবে না ।  হোন্ডা দিয়ে আমরা আসলাম ছোঁয়াখালি , এই প্রজন্ত পাকা রাস্তা । এর পরে কাচা রাস্তা । বৃষ্টি না হলে নামার বাজার প্রজন্ত হোন্ডা দিয়েই আসা যায় । আমরা হাটা শুরু করলাম প্রায় ২ কিলো মিটার হবে । ছোঁয়া খালি দারুন একটা স্থান । দুই পার্শে কেউরা বন মাঝখানে পীচ ঢালা পাথ । ভাগ্য ভালো হলে এখানয়েই সন্ধ্যায় হরিন দেখা যায় । মেঠো পথে দুই কিলো মিটার হাটার পর চলে আসলাম কাঙ্খিত নামার বাজার । মসজিদ বডিং  এ থাকার বেবস্থা ও গোসল করে খাইতে বাহির হলাম । দুপুরে বিশ্রাম । সময় কম তাই ঠিক করলাম পরের দিন বন দেখক্তে বাহির হব । বিকাল বেলাটা মেঘনা  নদীর বালু চরে ঘুরে বেড়ালাম । নদীর পারে না আসলে দেখা হত না সন্ধ্যায় রাখাল বালকদের গরু ও ভেরার পাল নিয়ে ঘরে ফেরা । অসাধারণ একটি মুহূর্ত ।





 দিনের বেলা বুঝা যায় নাই এখানে এতো মানুষের বসবাস করে  । সন্ধ্যায় এখানে মানুষের মিলন মেলা দেখে বুঝাগেল । নামার বাজারটা খুব ছোট । ৩ টা খাওয়ার দোকান ,২/১ টা চা পুরি সিঙ্গারার দোকান  , ঔষধ , মুদি অন্যান্য সব মিলিয়ে ২০/২৫ টা দোকান হবে । এখানকার খাওয়া খুব সস্থা । পরিচয় হোল সুমন, রাজিব , জিয়া দের সাথে । ওরা ঢাকা থেকে এসেছে । রাতেই ট্রলার ঠিক করা হোল ১৫০০ টাকায় , একটু বেশি ।


 সকালে নাস্তার পর্ব শেষ করে বেরিয়ে পরলাম । আমাদের গাইড সাগর , মনির , রাহাৎ । ট্রলার রাহতদের । এখানে ট্রলার চলে জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করে ।


 বন বিভাগের অফিসের গেটের উপরে মৌচাক আমরা বন বিভাগের অফিস পার হয়ে পূর্ব দিকে কিছু দূর গেলে একটা সাকো দিয়ে পার হয়ে ডুকে পরলাম কাঙ্ক্ষিত নিঝুম দ্বীপ এর বনে । বনের এই অংশ টা খুব ছোট , আগে এক সময় এখানে হরিন ছিল , এখন নাই । কিন্তু অনেক পাখির কিচির মিচিরে মনটা আনমনে হয়ে গেলো ।


 ট্র্যাকিং করে আমরা চলে আসলাম খালের পারে । আমাদের মূল গন্তব্য হোল চৌধুরি খাল এর পাশের বনটি ।


আমরা ৮ জন দুইটি গ্রুপ এ ট্র্যাকিং  শুরু করলাম । হরিনের পা এর ছাপ দেখে দেখে আমরা এগুতে লাগলাম । হরিনের মাথার একটা খুল্লি , কশেরুকা ও কিছু হার পেলাম । দেখতে পেলাম একটা মৃত হরিনের দেহাংশ , ৩ টা ছোট সাপ ,শামুক ও কাঁকড়া । পাখির কিচির মিচির তো আমাদের সঙ্গী । আশিস এর ভাগ্য ভালো , ও এর মধ্যে একটা হরিন ও একটা শিয়াল এর দেখা পেয়েছে ।



বনের ভিতরে   জীব জন্তুর পানি খাওয়ার জন্য একটা সুন্দর জলাধার আছে । আমরা গোসল করার লোভ সামলাতে পারলাম না । হালকা গুরি গুরি বৃষ্টির মধ্যে নেমে পরলাম আমরা । কেউই মনের আনন্দে গোছল করতে পারছিলাম না । কারন হরিনের দেখা এখন পাইনাই বলে । সবার চোখে মুখে অভিবেক্তিতেই বুঝা যাচ্ছে ।কিন্তু কেউই বলতে পারতাছে না ।

 আমরা আবার ট্রলারে উঠে রওনা দিলাম দুপুরের খাওয়ার বেবস্থা করার জন্য , রাখালদের ছোট একটা বিশ্রাম নেয়ার টং ঘর আছে , সেইখানে আমাদের এই বারের গন্ততব্ব ।


 সবাই একটা হতাশা নিয়েই চলে যাছি লাম। খালের দুই পাশেই সবার নজর , যদি দেখা মিলে । ফটোগ্রাফার রা পাখির ছবি তুলা নিয়ে আছে । হঠাৎ আমার চোখ স্থির হয়ে গেলো হরিনের পাল দেখে । আমি বাকরুদ্ধ ......... এ কি কলমের খোচায় বুঝান যাবে ।আশিস কে আস্তে ডাক দিয়ে দেখালাম , সবাই চুপ মেরে গেলো .........।।আমরা সার্থক । ট্রলার খুব সাবধানে পারে ভিরাল । হাঁটু পরিমান ঢেবে যাওয়া কাঁদাই আশিস নেমে গেলো ছবি তুলার জন্য । আমরা ট্রলারে বসেই দেখলাম হরিনের তিরিং ভিরিং লম্ফ । দুইটি মোটা তাজা শিয়ালও দেখা হয়ে গেলো । এখানে Sundarban এর Royal Bengal Tiger এর মতো হরিনের উপর খবর দারি করে শিয়াল মশাইরা।


খাল পারি দিয়ে এসে আমরা শবুজ মখমহলের মাঠে নামলাম । এখানেই সন্ধ্যায় হরিনের পাল আসে ঘাস খাওয়রা জন্য । মাঠ পার হলেই রাখালদের বিশ্রামাগার , অখানে মুরগী আগুনে ঝলসিয়ে পেটে দিলাম । সবারেই প্রচণ্ড খিদা লেগেছিল । আমরা কয়েক জন রাখাল বালকদের ভাত চেয়ে খাইলাম । ওরা অত্তান্ত মিশুক । আলু র লাল মরিচের ভাঝি , অসাধারণ একটি খাওয়া । এতো মজার একটা খাওয়া , না খেলে বুঝতামি না ।





সবুজ মাঠ পার হয়ে তারপরে খাল । আমাদের ছুটে চলা । সারি সারি বক সবুজ ঘাসে , হয়তো চাঁদের বুড়ি শাঁক তুলছে , কিন্তু এতো চাঁদের বুড়ি আসলো কোথাথেকে , অবাক বিশ্বয় ! এটাই নিঝুম দ্বীপ এর প্রাকৃতিক রূপ । সরু খাল দিয়ে আমাদের ছুটে চলা , পাখির কোলা হল আর মহিষের বাথান । কি দেখবে নাকি তোমরা ! পিছনে ফেলে আসা কেউরা বনে হরিনের বিচরন !!!!!!!!!!


 লেখা :Quamruzzaman Babu
Photo Credit: Quamruzzaman Babu , Ashis Datta 

ঢোঁড়া সাপ বেঁচে থাকুক আমাদের প্রয়োজনে


ইংরেজি নাম Checkered Keelback বৈজ্ঞানিক নাম Xenochrophis piscator বাংলায় ঢোঁড়া সাপ দেশের পরিচিত সাপের মধ্যে অন্যতম । বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায় । এরা সাধারণত পুকুর, ডোবা খাল- বিল,ফসলী জমি যেই খানে অল্প বিস্তর পানি থাকে ঐ সকল জায়গাতে বেশি দেখতে পাওয়া যায় ।জলের সান্নিধে বেশির ভাগ সময় থাকে বলে একে জলঢোঁড়া সাপও বলে। এদেরকে মাঝে মাঝে সমতল ভুমি ও পাহাড়ি অঞ্চলেও দেখতে পাওয়া যায় ।
সাপটির দৈর্ঘ্য ১৫০ থেকে ১৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। দেহের রঙ উপরিভাগ হলুদাভ সাদাটের সঙ্গেজুড়ে বাদামি বা কালো রঙের ছককাটা ছোপ ছোপ দাগ থাকে। দেহের নিচের অংশ চক চকে হলদে সাদাটে হয়ে থাকে । মাথার রঙ বাদামি। চোখের নিচে থেকে ওপরের ঠোঁট পর্যন্ত কালো একটা রেখা থাকে। ঢোঁড়া সাপের চোখ বড় ও বৃত্তাকার কোটর হয়ে থাকে ।
 

এদের খাদ্য তালিকায় আছে ব্যাঙ ,ইঁদুর, ছোট মাছ, পাখি , গিরগিটি ইত্যাদি । ব্যাঙ ও ইঁদুর খেয়ে খাদ্য শৃঙ্খলের এক অসাধারন ভুমিকা পালন করে ঢোঁড়া সাপ। নির্বিষ প্রজাতির হলেও সব চেয়ে বেশী আক্রোশের শিকার এই প্রজাতির সাপটি ।ক্রমাগত মানুষের আবাসভূমির বিস্তার, কৃষি জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ, জলাশয় ভরাট করে বসতি স্থাপনে এদের আবাসস্থল সংকোচনের পাশাপাশি জলাভূমি দূষিত হয়ে যাওয়ায় এরা খাদ্য এবং আশ্রয় হারাচ্ছে। আমাদের অজ্ঞতার কারনে যখন এরা খাবারের খোঁজে লোকালয়ে আসে তখন আমরা এদেরকে মেরে ফেলি। কৃষক জমিতে কীটনাশক ব্যাবহারের ফলে খাবারের দ্বারা আমাদের শরীরের মাঝে ও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আক্রান্ত হতে পারি বিভিন্ন মরণ ঘাতি রোগে। এতে আমাদের যেমন কর্ম ক্ষমতা হরাই তেমনি আর্থসামাজিক ক্ষেত্রেও অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হই ।
তাই আমরা যদি অযথা সাপ হত্যা না করি , কৃষক জমিতে বিষ প্রয়োগ না করে সাপ সংরক্ষণ করে তাহলে দেখা যাবে এই বিষ এর কারণে যেই রোগ হয় তা থেকে আমরা রক্ষা পাবো অপর দিকে আমরা আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রেও উপকৃত হবো। তাই পরিবেশ এর ভারসাম্য এর জন্য আমাদের বন্দু ঢোঁড়া সাপের রক্ষ্যায় সবাই সচেতন হই।

Aug/2014
snp

লাউডগা সাপ বেঁচে থাকুক আমাদের প্রয়োজনে



ইংরেজি নামটি Short-noscd vine snake হলেও দেখতে লাউয়ের কচি ডগার মত চিকন ও সবুজ বলে একে লাউডগা সাপ বলে । খাদ্য বা অন্য কোন প্রয়োজনে দেহের দুইদিক চ্যাপ্টা করে বাতাসের উপর ভড়করে উঁচু গাছের ডাল থেকে নিচু গাছের ডালে লাফ দিয়ে চলাফেরা করে বলে এর আরেকটি নাম পঙ্খীরাজ সাপ। কোন কোন অঞ্চলে একে পাতালতা সাপও বলে, হাল্কা পাতলা গড়নের এই সাপটি লতা পাতার উপর দিয়ে খুবিই দ্রুত চলাচল করে বলে হয়তো এই নামটি হয়েছে। প্রকৃতির রঙে রাঙানো সাপটি তাই ক্যামোফ্রেজ ছারাই প্রকৃতির সাথে এমন ভাবে মিশে থাকে যা চিনার কোন উপায় থাকে না। সাপটির বৈজ্ঞানিক নাম Ahaetulla prasina, Colubridae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এরা লম্বায় ১৬০ থেকে ১৯৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের দেহের রঙ সবুজ ,জলপাই সবুজ ও হাল্কা বাদামী হয়ে থাকে । সাপটির দেহ লম্বা ও চিকন, মাথাটি সরু অনেকটা সুচাল আকৃতির।
লাউডগা সাপ শান্ত স্বভাবের, তবে এরা কিছুটা বিষাক্ত হলেও এদের বিষ মানুষের জন্য ক্ষতিকর না। এদের বিষের প্রয়োগে আজ প্রজন্ত কোন মানুষ মারা যায় নাই। লাউডগা সাপ সাধারণত বনাঞ্চল,বাশ ঝাড় এবং গ্রামের ঝোপ ঝাঁড়ে দেখতে পাওয়া যায়। অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মত এরা সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে।মে ও জুন মাসে এরা একসাথে চারটি থেকে দশটি পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করে থাকে। এরা সাধারণত মাটিতে নামে না ।এদের খাদ্য তালিকাতে আছে পোকামাকড় ,টিকটিকি,গিরিগিটি, ব্যাঙ,ছোট পাখি ইত্যাদি । বাস্তুতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে প্রকৃতির এক অসাধারণ ভূমিকা পালন করে লাউডগা সাপ । কৃষক মাচার উপর যেই সবজি চাষ করে,তাতে কীটনাশক ব্যাবহার করে পোকামাকড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য । এই কীটনাশক যেমন সবজি খাদ্য মান নষ্ট করে আবার সবজি মাধ্যমে মানুষের শরীরে ডুকে শাররিক, মানসিক ও আর্থিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ করে। অথচ লাউডগা সাপ পোকামাকড় খেয়ে কীটনাশক মুক্তো সবজি উৎপাদনে এক অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া কৃষক কীটনাশকের পিছনে যে পরিমাণ অর্থ বেয়্ করে যদি ঐ সবজি ক্ষেতেলাউডগা সাপের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায় তাহলে কৃষক আর্থিক অপচয় থেকেও রক্ষা পাবে। এতে সবজির উৎপাদন খরচও কমে যাবে।
গ্রাম অঞ্চলের অতি পরিচিত একটি সাপ হল লাউডগা যা এক সময় বাংলাদেশের সব জাগায় দেখা মিলত। নির্বিচারে বন জঙ্গল ধ্বংসকরা,বাশ ঝাড় কেটে ফেলা গ্রামের ঝোপ জাড় পরিষ্কার করার ফলে এরা আশ্রয়হীন হয়ে পরচ্ছে, তাছারা মানুষের সাপের প্রতি অজ্ঞতা ও অযথা আক্রোশের কারণেই লাউডগা সাপ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ।মানুষের এবং প্রকৃতির এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু সাপ। প্রকৃতি থেকে সাপ হারিয়ে যাওয়ার পরিণাম কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা আমরা অনেকই জানিনা। তাই লাউডগা সাপ উৎপাদন, সংরক্ষন ও প্রকৃতি থেকে সাপের বংশ বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে এবং আমাদের দেশের সকল মানুষকে লাউডগা সাপ সহ সকল প্রকার সাপ সম্পর্কে সঠিক ধারনা প্রদান করে সাপ সংরক্ষণ করতে হবে যা পরিবেশ, কৃষি ও কৃষকের জন্য অতান্ত উপকারী।

নিঝুম দ্বীপের জীব বৈচিত্র্য ও জীব বৈচিত্র্য এর সমস্যা ......।।



অপার সম্ভাবনাময় সম্পদ আর ঐশ্বর্যে ভরপুর একটি রহস্যময় চরের নাম নিঝুম দ্বীপ ।  নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অন্তর্গত  অপার সম্ভাবনাময় সমৃদ্ধ  নিঝুম দ্বীপ ১৯৪০ সালে বঙ্গবসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে উঠা একটি চর । এটিকে দ্বীপ বলা হলেও , এটি  হাতিয়ার মুল ভূখণ্ডের  দক্ষিনে একটি চর । চরটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৬ ফুট উচু । ১৪,০৫০ একর এলাকা জুরে চরটি প্রথম দিকে অপরিচিতই ছিল , ওসমান নামের একজন বাথানিয়া তার মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম নিঝুম দ্বীপ বস বাস শুরু করে , তার নামেই চর ওসমান নামে দীর্ঘ দিন পরিচিত ছিল । পরবর্তীতে চর ওসমানের সৌন্দর্য ও পিনপতন নীরবতায় মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতি প্রেমিক হাতিয়ার ততকালিন সাংসদ আমিরুল ইসলাম এর নামকরন করেন নিঝুম দ্বীপ । বল্লার চর, চর ওসমান , কামলার চর এবং চর মুরি এই চারটি চর নিয়ে নিঝুম দ্বীপ । এই চর সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর ইছা মাছ পাওয়া যেত বিধায় একে ইছামতির চর বলেও ডাকতো । কালের আবর্তে এই নামটি হারিয়ে যায় । চরটির মাঝে মাঝে এক সময় প্রচুর বালির ঢিবি বা টিলার মতো ছিল , এখন তা না থাকলেও চরটির নাম বাইল্যার ডেইল এখনো কিছু কিছু মানুষের মুখে শুনা যায় ।





 ৭০ এর দশকে বন বিভাগ এই চরে তাদের কার্যক্রম শুরু করে । চটা খাল , ডাক্তার খাল , ফটকা খাল , চমন খালি ,চৌধুরী খাল , নাছারি , গামছা খাল , বুট্টা খাল , ডুবের খাল , ঠুয়ার খাল, ল্যাংড়ার খাল , জারদ দোনা , আবজং খালি , ছোঁয়া খালি , বাদার খাল , চৌইদার খাল ,  CDSP খাল  সহ অসংখ্য খাল ও কেওড়া গাছের সমন্বয়ে নিঝুম দ্বীপটি ম্যানগ্রোভ বনে রূপ নেয় ।





জন বসতি হীন এই বনে বন বিভাগ পরীক্ষামূলক ভাবে চার জোরা হরিন ছারে । বন বিভাগের অপরিপক্বতায় Ecosystem এর অভাবে দিন দিন এই জঙ্গলে হরিনের সংখ্যা বাড়তে থাকে । সুন্দরবন এর পরে এতো অধিক সংখ্যক হরিন আর কোন জঙ্গলে পাওয়া যায় না । এটি এখন হরিনের অভয়ারণ্য হিসাবে পরিচিত । ১৯৯৬ সালে হরিন শুমারি অনুযায়ী নিঝুম দিপে ২২০০০ হরিনের সংখ্যা রেকর্ড করা হয়। আইলা ও সিডরে বেশ কিছু হরিন মারা গেলেও ধারণা করা হয় নিঝুম দ্বিপে  ৪০০০০ হরিন আছে ।




 সুন্দরবনে খাদ্য শৃঙ্খল রক্ষায় যেমন  Royal Bengal Tiger , অজগর সহ কিছু মাংসাশী প্রাণী আছে যা হরিনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে (Density) ভুমিকা রাখে । প্রতিটি বনে কোন প্রাণী কতটি থাকতে পারবে তার একটি নিজস্ব নিয়ম (Territory) আছে , কিন্তু নিঝুম দ্বিপে তা দেখা যায় না । যেমন বৃক্ষর মধ্যে কেওড়া গাছের আধিক্য সবচে বেশি অন্য গাছ নাই বললেই চলে ,তেমনি জীব জন্তুর মধ্যে হরিন দেখা যায় । প্রতিটি জঙ্গলে গাছ পালা সহ জীব জগতের একটা পারসপরিক  সম্পর্ক Eco-system থাকে , নিঝুম দ্বিপে সম্পূর্ণই অনুপস্থিত । নিঝুম দ্বিপে হরিন ছাড়া আছে শিয়াল ও এলাকার কুকুর । শিয়াল জঙ্গলের কিছুটা শৃঙ্খল মেনে চললেও এলাকার কুকুর তা মেনে চলে না। নিঝুম দ্বিপের কুকুর গুলা খায় একটা হরিন , কিন্তু নষ্ট করে ৩/৪ টা হরিন । এ ছারা এখানে আছে হরিনের Food habit সমস্যা ।  এখানে কেওড়া ও কিছু গাস ছারা আর কোন খাদ্য নাই হরিনের জন্য । আর কেওড়া গাছ গুলা বড় হয়ে যাওয়াতে হরিনের নাগালের বাহিরে চলে গেছে । এখানে নাই কোন বানর যে হরিনের জন্য কেওড়া ফল বা পাতা ছিরে ফেলাবে । হরিন ও বানরের Mutualism এখানে নাই । যার কারনে হরিনের খাদ্যের প্রকট সমস্যা এই জঙ্গলে । খাদ্যের সমস্যা ও কুকুরের অযথা নষ্ট করার কারনে অনেক হরিন মরে পরে থাকে । নাই কোন শকুন যে মরা হরিন গুলা খাবে । এতে হরিন গুলো পচে নানা রকমের রোগ জিবানু ছড়ায় ।এই কারনে ক্ষত রোগ ও ক্ষুরা  রোগে আক্রান্ত নিঝুম দ্বিপের হরিন গুলো ।





এটি অথিতি পাখি চলাচলের একটি পথ । শীতের পাখি ছারাউ এখানে অনেক দেশিও পাখি আছে । খাল বিলের মাছ ও বিভিন্ন পোকামাকড় থাকলেও তেমন কোন ফলের গাছ নাই পখির খাদ্যের জন্য । বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও পাখির বাসা করার জন্য বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ এর সমন্বয়ের অভাব আছে এই জঙ্গলে । চৌধুরী খাল এর আশেপাশে ঘুরে দেখা গেলো তেমন কোন ঝোপ ঝার নাই যাতে বাসা করতে পারে পাখি , বন বিরাল , বাগডাশ সহ বিভিন্ন জীব জন্তু । জঙ্গলে কিছু ছোট সাপ ছারা তেমন কোন সাপ চোখে পরে নাই এই অঞ্চলে । এক বার অজগর ছারা হলেও বাঁচে নাই এইখানকার পরিবেশের কারনে । ব্যাঙ , খরগোশ , বেজি সহ অনেক প্রাণী অনুপস্থিত যা এই জঙ্গলের Eco-system এর দুর্বলতা প্রকাশ পায় ।




 করনিয়ঃ প্রথমত জীব বিজ্ঞানী , উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ,পরিবেশ বিজ্ঞানী সহ বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ , বনজ ও ঔষধী গাছ লাগাতে হবে । যেহেতু এটি একটি ম্যানগ্রোভ বন তাই এখানে সুন্দরি(Heritiera fomes), গেওয়া (Excoecaria agalloch) , গরান ( Cerips Decandra ), ধুন্দল ( Xylocarpus granatum),গোল পাতা ( Nypa fruticans) , অর্কিড , বুনফুল  সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো যেতে পারে । সেই সাথে বিভিন্ন প্রজাতির লতা গুল্ম Poresia, Coaractata, Myriostachy, Wightiana, শন ( Imperrata cylindrical),নল খাগড়া (Phragmites karka) লাগাতে হবে । সেই সাথে এখানকার আবহাওয়ার সাথে বিবেচনা করে ব্যাঙ , সাপ, গুই সাপ , খরগোস , কাঠ বিড়ালী , বাগডাশ , বন বিড়াল , বিভিন্ন প্রজাতির বানর , বন শুয়োর  ছারা যেতে পারে । হরিন শুমারি করে যদি দেখা যায় হরিন বেশী হয়ে গেছে তাহলে হরিন অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে ।



লেখা : Quamruzzaman Babu
Photo Credit : Ashis Datta




আগে যা দেখা হয় নাই !!





এই বার সাতছরি যাওয়ার প্ল্যানটা হুট করে হয়ে গেল । রাহুল বসাক যাবে ওর একটা কাজে , আমাকেও যেতে বললো ওর সাথে। লোভ সামলাতে পারলাম না । জঙ্গল এর এক আদিমতা আমাকে নেশার মত আকৃষ্ট করে । ৩০/১০/১৩ তে উত্তরা থেকে বাসে চেপে বসলাম আমি,রাহুল, রাহুলের এক বড় ভাই সিহান । রাত্র ৯ টায় পৌঁছলাম সাতছরিতে । ......। পরিচয় হল মুনির ভাই ও প্রসেঞ্জিত এর সাতে । উনাদের সম্পর্কে চলার পাথে কমেন্টস করব।



 আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বাহির হয়ে পরলাম । সাথে পানির বোতল , টর্চ , সাপ ধরার স্টিক নিলাম। হালকা ঠাণ্ডা পরাতে একটা গরম কাপর চেপে নিলাম । অসাধারণ এক যাত্রা । রাত্রে এই প্রথম আমি জঙ্গলে গেলাম । অনুভব করলাম , প্রকৃতিকে জানতে হলে, প্রকৃতিকে বুঝতে হলে যেতে হবে প্রকৃতির কোলে । রাত্র তখন ১১ টা প্রকৃতি আলিঙ্গন করছে আপনাকে, অনুভূতিটা কেমন হবে। সুনশান নীরবতা , পাহাড়ি ছরা দিয়ে হাটা , অসংখ্য ঝি ঝি পোকার ঝি ঝি ডাক , শিয়ালের হুঙ্কার , তক্ষকের ডেকে যাউয়া , মায়া হরিণ ও শূয়র এর পদ চিহ্ন , কেমন অনুভুতি হবে। আকাশে হাজারও তাঁরার ঝিলিমিলি খেলা , বাতাসে ছাতিম ফুলের মাদকতাময় সুবাস । Pit Viper এর সাথে সাক্ষাৎ গাইড প্রসেঞ্জিত এর চোখকে ফাখি দেয়া কি চাট্টিখানি কথা , সাথে সাথে রাহুল বসাক এর ক্যামারার কিলিক । আরও কিছু ব্যাঙ ও মথ এর দেখা পেলাম, ১১.৩০ এ Dormetory তে ফিরলাম । হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসলাম । বিছানায় যাওয়ার সাথে সাথে ঘুম ।

 খাঁচাই বন্দি অথবা গৃহপালিত কোন জীব জন্তু দেখা আর জঙ্গলে পুর বন্য অবস্থায় দেখা , অনুভূতি টা কেমন হবে ।আমারটা তো আর লিখে প্রকাশ করতে পারতাছি না , আপনি ঘুরে আসুননা কোন জঙ্গলে । এমনি একটা দৃশ্য চোখ বন্দি করলাম সারা জীবনের জন্য , বন্য শুয়োরের চলা ফেরা । ভোর বেলাই পেয় গেলাম ।



 অল্প কিছুক্ষণ ঘুরে চলে আসলাম Dormetory তে । আফসোস রাহুলরা ধনেশ এর দেখা পেলো , আমার সাথে ধনেশটি রাগ করেছিল , ১০ সেকেন্ড এর বেবধানে চলে গেলো ।



দুপুরে টিপরা পল্লী তে গেলাম , অসাধারণ ! মাটির ঘর গুলা খুব সুন্দর , দেখা হলো ওদের সহজ সরল চলা ফেরা,যা বাহিরে থেকে বুঝার উপায় নাই । আপনি অনুমতি নিয়ে ওদের পল্লীটা ঘুরে দেখক্তে পারেন। প্রশেঞ্জিত ঘুরিয়ে দেখাল ওদের পাড়াটা । এটি যেন সাতছরির একটি অলঙ্কার । আজ ওদের মধ্যে শোকের ছায়া । গতকাল পরসেঞ্জিত এর নানি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। কিছুক্ষণ আগে উনাকে দাহ করানো হয়েছে ।আমি সত্যি ! সত্যি অবাক হয়েছি প্রসেঞ্জিত এর ব্যাবহারে । ওর নানির দেহ রেখে ও আমাদেরকে সময় দিয়েছে । আমরা ঢাকার মানুষরা কি করতাম ? আমরা কতোটা যান্ত্রিক মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করেছি বারবার ,উত্তর খুজে পাইনাই । Sorry সুস্ময়। প্রসেঞ্জিত এর আর একটা নাম সুস্ময়।




 টিপরা পাড়া থেকে ফিরে এসে Rhesus Macaque আর জঙ্গল এর কিছু ছবি তুলছিলাম , হঠাৎ চোখ পরল লাল সূর্য ডুবা । নদী আর সাগর পারে সূর্য ডুবা অনেক দেখেছি , জঙ্গলে সূর্য ডুবা এই প্রথম। বিশাল এক বড় থালা আস্তে আস্তে অস্থমিত যাছে । কিন্তু ঠিক মতো তুলতে পারছিলাম না বড় বড় সেগুন গর্জন গাছ গুলার জন্য। রাহুলের কাছে ক্যামারা দিয়ে আমি সূর্যের দিকে তাকাতে তাকাতে ডাল পালা বিহিন খোলা জায়গা খুজতে সামনে এগোচ্ছই , বিধিভাম , ভিমরুল এর চাকে পড়ে গেছিলাম , দেছুট । আমার দৌড় রাহুলের ক্যামারা বন্দী হতে থাকলো আর আমার হাসি ...। তখনও বুঝি নাই ভিমরুল এর হুল এতো ভয়ঙ্কর হয় ।



সন্ধ্যায় বাহির হলাম মুনির ভাই, রাহুল, শিহান , প্রসেঞ্জিত ও আমি । মুনির ভাই ও উনার Wife তানিয়া আপু সম্পর্কে অনেক শুনেছি রাহুলের কাছে । উনার কাছে এসে বুঝলাম উনি কতো উঁচু মাপের মানুষ । যেমন মন মানুষিকটা তেমনি প্রকৃতি ও জীব জন্তু সম্পর্কে ধারণা । উনার আন্তরিকতা দেখে মনেই হয় না গত রাত্রে উনার সাথে পরিচয় হইছে । Night Safari সম্পর্কে আমার কোন ধারণা ছিল না , মুনির ভাই তা সুন্ধর ভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিলেন । মুনির ভাই প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা এতো সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে ছিলেন যে আমার কাছে মনে হচ্ছিলো এইগুলাতু আগেই জানতাম । উনি প্রকৃতিকে মমতা দিয়ে ভালো বাসেন বলেই এতো সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে পারেন । আগে আমি প্রজাপতি আর মথ একই প্রকার বলে মনে করতাম , আজ ভুল ভাঙ্গল । কিছু Gecko দেখলাম । পিছন থেকে প্রসেঞ্জিত এর চিৎকার । দৌড়ে গেলাম । প্রসেঞ্জিত এর তিক্ষনো চোখে ধরা পরে গেলো Green cat snake । আমার মনে হয় বাংলাদেশ এর সবচে ছোট Zooligist প্রসেঞ্জিত , যে কোন প্রাথিস্ঠানিক শিক্ষাই এগুলা জানে না । ও বাংলা ১ম বর্ষের ছাত্র । ও Zoologi সম্পর্কে শিক্ষা নিচ্ছে মুনির ভাই , তানিয়া আপু ও প্রকৃতি থেকে । তানিয়া আপুর সাতে আমার পরিচয় হয় নাই , আশা রাখি সামনে আমার এই সোভাগ্য হবে । উনাদের নিবিড় পরিচর্যায় গড়ে উঠতাছে হাতে কলমে শিক্ষা নেয়া এক Zooligist প্রসেঞ্জিত । একটি খুব সুন্দর Htun Win's Tree Frog এর দেখা পেলাম । আগে কখন দেখি নাই । এতো সুন্দর ব্যাঙ আমাদের দেশের , সরাসরি না দেখলে মনে করতাম এইটা বিদেশী কোন ব্যাঙ । মুনির ভাই আর রাহুলদের ক্যামেরার ক্লিক , ফটা ফট ছবি তুলে যাছে ওরা । যখন Dormetory তে ফিরলাম ভ্রমরের বেথা আবার অনুভব করতে লাগলাম । জঙ্গলের নেশাই এতু ক্ষণ টের পাইনাই । ভাত খেয়ে মুনির ভাই আর রাহুলের গানের আসর , আমি ঘুমিয়ে পরলাম । মাঝ রাতে আমি বেথা বেথা করে চিৎকার করে ঘুম থেকে উঠলাম । মুনির ভাই সন্ধায় বেথার জাগায় স্প্রে ও মলম লাগিয়ে দিয়ে ছিল । তাতেই একটু ঘুমিয়ে ছিলাম । বেথা কাকে বলে বুঝলাম । হাতে মুখে পানি দিয়ে আবার স্প্রে করে শুয়ে পরলাম ।





ভোর বেলা রাহুল ও সিহান বের হল , আমি শুয়ে থাকলাম । শুয়ে বসেই কাটল দুপুর বেলাটা । ভাত খেয়ে ৩০ মি বিশ্রামের সময় দিল মুনির ভাই । এইবা বের হলাম ৫ জন ।পরিচয় হল অনেক পাখির সাথে ,দেখা হল Pharey's Leaf Monkey , Pig teiled Macaque & Capped Langur । এ ছারা প্রজাপতি ও মথ তু ছিলই । সাতছরি পাখির এক বিশাল অভয়ারণ্য । এখানে ১৬২ প্রজাতির পাখি দেখতে পাওয়া গেছে ( তথ্য সুত্র: মুনির আহমেদ ), আরও অনেক প্রজাতি থাকতে পারে বলে মনে করেন এখাঙ্কার বাসিন্দারা । আছে ১৯ প্রজাতি Frog,৩৮ প্রজাতির Reptiles . ১.৩০ মি এর মতো ট্র্যাকিং করলাম । বিকালে ফিরে চা পুরি খেয়ে সময় কাটান ।

সন্ধ্যায় আরও এক Nature Lover আমাদের সাথে যুক্ত হলেন , উনি তেলমাছরা বিট এর কর্মকর্তা , মাসুদ ভাই। এইবার আমরা একটি নতুন ছরা দিয়া ট্র্যাকিং শুরু করলাম । এই ছরাটি কোথাউ চরা আবার কোথাউ এতো সরু যে গাছের ডাল পালা গুলা শরীর ও মাথায় বারি খাচ্ছিল । গা ছম ছম করা রোমাঞ্চকর এক অনভুতি । দিনের বেলাই এই পথে ট্র্যাকিং করা রোমাঞ্চকর , আর এখন রাত্র বেলা ।এই কয় দিন যেই কয়টি Pit Viper পেয়েছি আজকেরটা সবচে বড় শুরু হয়ে গেলো Click Click । অসাধারন অসাধারন অনুভূতি , তা কি আর লিখে বুজানো যাবে ।

    চলে আসলাম Dormetory তে । ভাত খাওয়ার পর মুনির ভাই কে নিয়া বসলাম , উনি প্রকৃতির এক পাগল সন্তান , প্রকৃতিকে উনি যেমন ভালবেসেছেন , প্রকৃতিও উনাকে উজার করে দিয়েছে । সব চেয়ে অবাক বেপার হলো , সাতছরি তে উনার দেখতা১৯ টা Frog, ৩৮ টা Reptiles , ১৬২ টা পাখির নাম উনি বলে গেছেন , একটি পাখির নামও উনি দ্বিতীয় বার বলেন নাই । এই নিবৃত্তচারি প্রকৃতির সন্তান কে জানাই হাজারো সালাম । শুরু হলো গানের আসর , ঠোঁট নারলাম আমরা । গানের আসর শেষ হলে রাহুল ,সিহান, আমি মাসুদ ভাইকে তেলমাছরা এগিয়ে দিয়ে আসলাম । দুই পার্শে চা বাগান মাঝখানে পিচ ডালা পথ , হালকা ঠাণ্ডা , আকাশে হাজারো তাঁরার মেলা, কি যাবেন নাকি ? সকালে বিদায়ের ঘণ্টা , মাসুদ ভাই আর প্রসেঞ্জিত চলে আসলো বিদায় দেয়ার জন্য ..................। এর আগেও কয়েক বার সাতছরি তে গিয়েছিলাম খিলগাঁও মডেল উনিভারসিটি কলেজ থেকে , কিন্তু এইবার যা দেখলাম আগে কি তা দেখেছি
........................।।


তথ্য সুত্র : মুনির আহমেদ দাদা
লেখা: কামরুজ্জামান বাবু
ছবি তুলেছেন : মুনির আহমেদ দাদা,কামরুজ্জামান বাবু , রাহুল বাসাক

শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৬

দাঁড়াশ সাপ বেঁচে থাকুক আমাদের প্রয়োজনে

বাংলায় দাঁড়াশ নামে পরিচিত হলেও ইঁদুর এদের প্রধান খাদ্য বলে ইংরেজিতে একে র‌্যাট স্নেক (Rat snake) বলে। সাপটির বৈজ্ঞানিক নাম Ptyas mucosa । সম্পূর্ণ বিষ হীন Colubridae গোত্রের অন্তর্ভুক্ত । এদের দেহের রং হালকা বাদামি বা হলুদ বাদামি কিংবা কালচে জলপাই বাদামি হয়ে থাকে ।এরা লম্বায় ২০০ থেকে ৩৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

দাঁড়াশ এর ব্যাবহার খুবেই আক্রমানাক্ত ও মারমুখি , এরা খুব দ্রুত গতিতে চলাফেরা করতে পারে । দাঁড়াশ সাপের এই ব্যাবহারের জন্য মানুষ একে ভয়ংকর ও বিষাক্ত বলে মনে করে ।লোক গল্পে আছে যে দাঁড়াশ সাপের লেজে বা নাভিতে এক ধরনের কাঁটা থাকে যা খুবেই বিষাক্ত । কথাটা সম্পূর্ণ ভিত্তি হীন , বাস্তবে দেখা গেছে দাঁড়াশ সাপের কোন নাভি নাই। শুধু বায়ু পথ আছে । পুরুষ দাঁড়াশ সাপের ক্ষেত্রে কখনো কখনো বায়ু পথে পুরুষাঙ্গ দেখা যায়,এইটাকেই অনেকে ধারণা করে বিষাক্ত কাঁটা। এরা গাছ বেয়ে উঠা , সাঁতার কাটা ও ডুব দিয়ে থাকতে পারে অনেক খন প্রজন্ত ।ধরা পড়ার পর কিছুটা মারমুখি দেখালেও পরে খুব সহজেই পোষ মেনে যায়।

ব্যাঙ ,ইঁদুর, ছুঁচো, পাখি ,বাদুড়, গিরগিটি, ইত্যাদি খেয়ে খাদ্য শৃঙ্খলের এক অসাধারন ভুমিকা পালন করে দাঁড়াশ সাপ।এদের খাদ্যাভ্যাস উপকৃত করছে আমাদের কৃষিকে এবং ভারসাম্য রক্ষা করছে আমাদের প্রকৃতির । প্রতিবছর বীজতলা থেকে শুরু করে খাদ্যগুদাম পর্যন্ত ইঁদুরে বিনষ্ট করে উৎপাদিত খাদ্যশস্যের ৩০ শতাংশ।তাছারা ইঁদুর নিধনে যেই বিষ প্রয়োগ করা হয় সেই বিষের প্রভাবে অন্যান্য প্রাণীও আক্রান্তত হয়ে থাকে।এতে পরিবেশের মারাত্মক ভারসাম্য হানি হয়। এই বিষ খাদ্য বস্তুর মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নানা বিধ মারাত্মক রোগের প্রভাব বিস্ততার করে , যা আর্থিক ও মানুষিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ করে আমদেরকে । উল্লেখ্য কৃষি কর্মকর্তাদের মতে একটি দারাজ সাপ প্রায় ৩ একর ফসলী জমির ইদুর নিধন করতে সক্ষম।তাই আমরা কীটনাশক ও বিষ প্রয়গ থেকে সরে এসে যদি পরিবেশবান্ধব সাপ সংরক্ষণ করি তাহলে আমরা অনেক উপকৃত হবো।এতে প্রতিবছর ইঁদুর দমন অভিযানের মাধ্যমে অর্থ ব্যয় এর পরিমাণও কমে যাবে। ইঁদুরের কবল থেকে এদেশকে মুক্ত করতে চাইলে,,, দারাজ সাপ উৎপাদন, সংরক্ষন ও প্রকৃতি থেকে সাপের বংশ বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে এবং আমাদের দেশের সকল মানুষকে দারাজ সাপ সহ সকল সাপ সম্পর্কে সঠিক ধারনা প্রদান করে সাপ সংরক্ষণ করতে হবে যা কৃষি ও কৃষকের জন্য উপকারী।

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মশা ও মাছি বাহিত রোগ , যা ব্যাঙ মশা ও মাছি খেয়ে এই সকল রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে

                                                                             " বন্য প্রাণী বেঁচে থাকুক আমাদের প্রয়োজনে " ...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ